social media ban : সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে

social media ban : নেপাল সরকার সম্প্রতি দেশের জনগণের ব্যবহৃত জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তে দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছে। এই প্রতিবেদনে নেপাল সরকারের সামাজিক মাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তের কারণ, এর পরবর্তী পরিস্থিতি এবং দেশজুড়ে এর প্রভাব বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
social media ban : প্রেক্ষাপট এবং কারণ
নেপাল সরকারের যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় (MoCIT) গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে একটি নির্দেশিকা জারি করে। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, নেপালে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হলে সমস্ত দেশীয় এবং বিদেশি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মকে সরকারের সঙ্গে নিবন্ধিত হতে হবে। এই নিবন্ধনের জন্য সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স (আগেকার টুইটার), ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, লিংকডইন এবং রেডডিট-এর মতো আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলো সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়।

সরকার জানায়, সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যেখানে আদালত অনিবন্ধিত প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন ও কন্টেন্ট সম্প্রচার বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে বারবার নিবন্ধনের অনুরোধ করা হলেও তারা তাতে কর্ণপাত করেনি। তবে, টিকটক এবং ভাইবারের মতো কিছু প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে নিবন্ধন করায় তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়নি। সরকারের যুক্তি হলো, এই পদক্ষেপ ঘৃণা ছড়ানো, ভুয়ো খবর এবং অনলাইন অপরাধ দমনের জন্য প্রয়োজনীয়।
social media ban : পরবর্তী পরিস্থিতি এবং প্রতিক্রিয়া
social media ban : সামাজিক মাধ্যম বন্ধের ঘোষণার পর নেপালের পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাজার হাজার যুবক, শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবী প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। কাঠমান্ডুর রাস্তায় ‘বাকস্বাধীনতার ওপর আঘাত’ এবং ‘গণতন্ত্রকে হ্যাক করা হয়েছে’ ইত্যাদি স্লোগানে বিক্ষোভ শুরু হয়।
প্রতিবাদকারীরা জানান, সরকারের এই পদক্ষেপ শুধু বাকস্বাধীনতার ওপর আঘাত নয়, বরং এটি তাদের দৈনন্দিন জীবন, ব্যবসা এবং বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমকেও ব্যাহত করছে। নেপালের বহু মানুষ, বিশেষ করে বিদেশে কর্মরত প্রায় ৭০ লক্ষ নেপালি নাগরিক, তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সামাজিক মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল।

প্রতিবাদ চলাকালীন, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জল কামান এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজধানী কাঠমান্ডুর কিছু এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ
social media ban : নেপাল সরকার তার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি জানিয়েছেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কোনো ব্যক্তি বা প্ল্যাটফর্মের জন্য ক্ষুণ্ন হতে দেওয়া হবে না। অন্যদিকে, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরকারের এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছে। তারা একে ‘সেন্সরশিপ’ এবং ‘প্রেস স্বাধীনতার ওপর বিপজ্জনক উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।
তবে, সরকার জানিয়েছে যে, যে কোনো প্ল্যাটফর্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেই তাদের পরিষেবা পুনরায় চালু করা হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, কারণ এটি প্ল্যাটফর্মগুলোকে নেপালের আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করার একটি সুযোগ দিচ্ছে।
জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার এবং যোগাযোগের মাধ্যম হারানোর আশঙ্কায় শঙ্কিত
নেপালের সামাজিক মাধ্যম বন্ধের ঘটনাটি বাকস্বাধীনতা এবং ডিজিটাল অধিকারের ওপর একটি বড় প্রশ্ন তুলেছে। একদিকে, সরকার জাতীয় নিরাপত্তা এবং শৃঙ্খলা রক্ষার কথা বলছে, অন্যদিকে জনগণ তাদের মৌলিক অধিকার এবং যোগাযোগের মাধ্যম হারানোর আশঙ্কায় শঙ্কিত। এই ঘটনাটি শুধু নেপালের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এটি বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি এবং সরকারের মধ্যে সম্পর্ককে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, নেপালের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা মূলত সরকার এবং আন্দোলনকারীদের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আলোচনার ওপর নির্ভরশীল।