Rajiv Gandhi : ভারতীয় ইতিহাসে ‘রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড’

Rajiv Gandhi : ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর মৃত্যু ছিল একটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা, যা ভারতীয় ইতিহাসে ‘রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ড’ নামে পরিচিত। নিচে এই ঘটনার বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো
Rajiv Gandhi : মৃত্যুর তারিখ ও স্থান
রাজীব গান্ধী ১৯৯১ সালের ২১ মে, মঙ্গলবার, তামিলনাড়ু রাজ্যের শ্রীপেরুমবুদুরে (শ্রীপেরামবুদুর) এক নির্বাচনী জনসভায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন। এই হামলায় তিনি ছাড়াও আরও ১৪ জন নিহত হয়েছিলেন।

Rajiv Gandhi : হত্যাকারীর পরিচয়
রাজীব গান্ধীকে হত্যা করে লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই) -এর সদস্যা তেনমোঝি রাজারত্নম, যার অপর নাম ছিল ধানু। পরবর্তীতে আত্মঘাতী বোমা বহনকারী এই নারীর আসল নাম গায়ত্রী বলে জানা যায়।

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ
১৯৯১ সালের ২১ মে, রাত ১০টার দিকে, রাজীব গান্ধী যখন শ্রীপেরুমবুদুরের জনসভাস্থলে পৌঁছান, তখন হত্যাকারী ধানু তাঁর দিকে এগিয়ে যায়। সে রাজীব গান্ধীকে অভিবাদন জানায় এবং তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করার ভান করে। এই সুযোগে সে তার পোশাকের নিচে বাঁধা প্রায় ৭০০ গ্রাম আরডিএক্স ভর্তি বেল্টটি বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণের তীব্রতায় রাজীব গান্ধী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তার দেহ প্রায় ২ মিটার দূরে ছিটকে পড়েছিল এবং ধানুর শরীরও ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
হত্যার পেছনের কারণ
রাজীব গান্ধীকে হত্যার প্রধান কারণ ছিল শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধে ভারতের হস্তক্ষেপ। ১৯৮৭ সালে রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জুনিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধনের সঙ্গে একটি চুক্তি করেন। এই চুক্তির আওতায় শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী (আইপিকেএফ) মোতায়েন করা হয়েছিল। আইপিকেএফ মোতায়েনের পর লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (এলটিটিই) বিদ্রোহীদের সঙ্গে তাদের বিভিন্ন সময় লড়াই হয়, যাতে ভারতের কয়েক হাজার সেনাও নিহত হয়েছিলেন। এই ঘটনার কারণে এলটিটিই রাজীব গান্ধীর প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল এবং দীর্ঘ পরিকল্পনা করে তাকে হত্যা করে।

তদন্ত ও বিচার
রাজীব গান্ধী হত্যার তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের আইজি, ডি আর কার্তিকেয়নের নেতৃত্বে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠিত হয়েছিল।
কয়েক মাসের মধ্যেই সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। মূল অভিযুক্ত শিভারাসন এবং তার কয়েকজন সঙ্গী ধরা পড়ার আগেই সায়ানাইড বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করে।
তদন্ত চলাকালীনই রাজীব হত্যায় এলটিটিই-এর যোগসূত্র সামনে আসে।
১৯৯৮ সালে ভারতের একটি টাডা আদালত এই হত্যা মামলায় ২৬ আসামীর সবাইকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্ট মাত্র চারজনকে মৃত্যুদণ্ড ও বাকি তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। অন্যদের খালাস দেওয়া হয়।
২০০০ সালে রাজীব গান্ধীর স্ত্রী সোনিয়া গান্ধীর মানবিক আবেদনের ভিত্তিতে নলিনী শ্রীহরনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০১৪ সালে বাকি তিনজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশও বাতিল করে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০২২ সালের ১১ নভেম্বর, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দণ্ডপ্রাপ্ত সাতজন আসামীর মুক্তি আদেশ দেন। এর প্রায় ৩৩ বছর পর নলিনী, জয়কুমার ও পেরারিভালান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পরিবারের সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। শ্রীলঙ্কার নাগরিক হওয়ায় বাকি চারজনকে (মুরুগান, রবার্ট পায়াস ও জয়কুমার) তিরুচির বিশেষ কারাগারে রাখা হয়। এদের মধ্যে সানথান অসুস্থ হয়ে মারা যান এবং বাকি তিনজন ২০২৩ সালের এপ্রিলে মুক্তি পেয়ে শ্রীলঙ্কায় ফিরে যান।

প্রভাব
রাজীব গান্ধীর এই হত্যাকাণ্ড ভারতের রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছিল এবং এটি একটি জাতীয় সরকারের পতনের কারণ হয়েছিল। তাঁর মৃত্যুর পর রাজীব গান্ধীকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ ভূষিত করা হয়

Table of Contents
Disclaimer:
Disclaimer:
This post is for educational and analytical purposes only, based on open-source data. It does not promote violence or aggression.