Israel-Iran War : ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতি: উত্তেজনার আগুনে আবারও দাউদাউ মধ্যপ্রাচ্য

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে এক নতুন ঢেউ তুলেছে ইরান ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিগুলোর মধ্যকার চলমান উত্তেজনা। সম্প্রতি সিরিয়া, ইরাক, লেবানন ও গাজা উপত্যকায় ছায়াযুদ্ধের আবহে ইরান ও পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে উঠেছে। এই উত্তেজনা শুধু ইরান-ইসরায়েল কিংবা যুক্তরাষ্ট্র-ইরান দ্বন্দ্বে সীমাবদ্ধ নয়; বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে এক সম্ভাব্য বড় যুদ্ধের আভাস দিচ্ছে।
Israel-Iran War : উত্তেজনার পটভূমি
ইরান দীর্ঘদিন ধরে তার প্রভাব বিস্তারের কৌশল হিসেবে বিভিন্ন সশস্ত্র মিলিশিয়া ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। হিজবুল্লাহ (লেবানন), হুথি (ইয়েমেন), ও প্যালেস্টাইনের হামাস সহ বহু সংগঠনের সঙ্গে ইরানের জোট কার্যত একটি অঘোষিত ‘শিয়াপন্থী অক্ষ’ তৈরি করেছে। এই অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালের শেষ দিকে গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ ঘনিয়ে এলে ইরান সরাসরি সামরিকভাবে জড়িয়ে না পড়লেও তার সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো ইসরায়েল ও মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা শুরু করে। এর জবাবে মার্কিন ও ইসরায়েলি বাহিনী ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনে ইরানের ঘাঁটি লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালায়। ফলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে।
ইসরায়েল-ইরান সরাসরি সংঘাত?
Israel-Iran War : ২০২৫ সালের শুরুতে ইরান সরাসরি ইসরায়েলে একাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও ইরান তা অস্বীকার করে, ইসরায়েল তা “যুদ্ধ ঘোষণার শামিল” বলে মন্তব্য করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল তেহরানের সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এই প্রথমবার ইরান ও ইসরায়েল সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, যা এ অঞ্চলে বহুদিনের ‘ছায়াযুদ্ধ’কে একপ্রকার প্রকাশ্য যুদ্ধে রূপ দেয়।
Israel-Iran War : পরিণতি ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এই সংঘাতের ফলে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন স্বার্থও হুমকির মুখে পড়েছে। ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলো বারবার হামলার শিকার হচ্ছে। পারস্য উপসাগরে জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে, যা বৈশ্বিক তেল সরবরাহ ও দামের ওপর প্রভাব ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ সংঘাত প্রশমনের আহ্বান জানালেও কার্যত কোনো পক্ষই পিছু হটতে রাজি নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, যদি এই যুদ্ধ পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে, তবে তা শুধু ইরান বা ইসরায়েলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না; বরং লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক থেকে শুরু করে সৌদি আরব, কাতার এমনকি তুরস্কও এতে জড়িয়ে পড়তে পারে।
ইরানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি
এই আন্তর্জাতিক সংঘাতের পাশাপাশি ইরানের অভ্যন্তরেও সরকারবিরোধী আন্দোলন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব বাড়ছে। জনগণের একাংশ যুদ্ধবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে, যার ফলে রাজনৈতিক অস্থিরতাও বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক কূটনীতির আসল চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার সরাসরি সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে এক নতুন অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই যুদ্ধ যদি বিস্তার লাভ করে, তবে তা শুধু এই অঞ্চলেই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও এক গভীর প্রভাব ফেলবে। এখন আন্তর্জাতিক কূটনীতির আসল চ্যালেঞ্জ হল—এই উত্তেজনাকে কত দ্রুত প্রশমিত করা যায়, যুদ্ধ নয় বরং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে ফিরে যাওয়া যায়।