আইসিডিএস সেন্টারে চাল চুরি: Rice theft at ICDS center

কথায় আছে—লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। যদিও এই ঘটনায় মৃত্যু না হলেও, পাপ যে শেষ পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে গড়িয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
ঘটনাটি ঘটেছে সাঁকরাইল থানার অন্তর্গত কুলটিকরী এলাকার পশ্চিম বালিগেড়িয়ার লোধাপাড়ায়। সোমবার গভীর রাতে একটি সরকারি আইসিডিএস (ইন্টিগ্রেটেড চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস) সেন্টার থেকে চুরি যায় একটি চালের বস্তা। শুনে হয়তো আশ্চর্য লাগছে—মাত্র একটি চালের বস্তা চুরি, তাও আবার রাতের অন্ধকারে?
কিন্তু বিষয়টা ঠিক ততটাও সরল নয়। চোর বাবাজি শুধু একটি বস্তা নিয়েই সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাঁর লক্ষ্য ছিল আরও বেশ কয়েকটি বস্তা চাল হাতানো। তবে অতিরিক্ত মদ্যপান এবং শরীরের অসুস্থতার কারণে কেবল একটি বস্তা নিয়েই পালাতে বাধ্য হন তিনি।
শিশুদের জন্য বরাদ্দ চাল চুরি করে মদের ঠেকে জমা রাখা

Rice theft at ICDS center : এখানেই শেষ নয়। চুরি করা চাল নিয়ে তিনি কী করলেন, তা জানলে সত্যিই চোখ কপালে উঠবে। জানা গিয়েছে, ওই বস্তা চাল তিনি সরাসরি একটি মদের ঠেকে দিয়ে আসেন বিনিময়ে মদ পাওয়ার আশায়। শিশুদের পুষ্টির জন্য বরাদ্দ চালের এমন অপব্যবহার দেখে হতবাক স্থানীয় বাসিন্দারা।
চোরের পরিচয় ও পূর্ব ইতিহাস
চোরের নাম ভীম নায়েক, যার বাড়ি লোধাপাড়া এলাকাতেই। পূর্বেও সে একাধিক ছোটখাটো চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল এবং পুলিশের নজরও ছিল তার উপর। তাই এলাকার আইসিডিএস সেন্টারে চুরির ঘটনা ঘটার পরেই সন্দেহের তীর ভীমের দিকেই যায়। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অপরাধ স্বীকার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চুরি যাওয়া চাল ইতিমধ্যেই উদ্ধার করে ফেরত দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সেন্টারের দিদিমনির হাতে। ভীম নায়েককে গ্রেফতার করে সাঁকরাইল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আইসিডিএস সেন্টারের করুণ চিত্র: Rice theft at ICDS center

চাল চুরির এই খবর করতে গিয়ে সাংবাদিকরা আইসিডিএস সেন্টারের বেহাল দশা দেখে হতবাক। সেন্টারের সামনে কোনো স্থায়ী ছাউনি নেই। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত পরিষ্কার পানীয় জলেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। সেন্টারের সামনেই একটি বড় পুকুর রয়েছে, যেখানে যেকোনো সময় বাচ্চাদের বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সেন্টারের দিদিমণি জানিয়েছেন, বহুবার লিখিতভাবে জানানো হলেও স্থায়ী ছাউনির ব্যবস্থা হয়নি। বৃষ্টির সময় বাচ্চাদের পড়াশোনা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
এলাকাবাসীর দাবি
স্থানীয় বাসিন্দা মিঠুন নায়েক বলেন,

“এই সেন্টারে প্রতিদিন অনেক শিশু আসে। অথচ এখানে নেই কোনো পাঁচিল, নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। অবিলম্বে এখানে একটি পাকাপোক্ত পাঁচিল, পার্মানেন্ট ছাউনি এবং জল সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হোক।”
এই ঘটনার পর প্রশাসনের তরফে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এই ঘটনার মাধ্যমে সমাজের কিছু বাস্তব দিক যেমন উন্মোচিত হলো, তেমনই আইসিডিএস-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক প্রকল্পগুলির অব্যবস্থা ও নিরাপত্তার অভাব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে
স্থানীয় সংবাদ, সাঁকরাইল, ঝাড়গ্রাম, থেকে সৌমেন আদক