Constant service to animals by saving tiffin money : কবি যোগীন্দ্রনাথ সরকার লিখেছেন
“ছোট তারা হাসে আকাশের গায়,
ছোট ফুল ফোটে গাছে,
ছোট বটে তবু তোমার জগতে
আমাদেরও কাজ আছে”।
এক প্রবল সম্ভাবনাময় আগামীর প্রতিদিনের কাজ এই কবিতার পঙক্তিকে করছে নিখুঁতভাবে বাস্তবায়িত। চলতি সমাজের বিপরীতে হেঁটে চলেছেন সাউরী ভোলানাথ বিদ্যামন্দিরের উচ্চমাধ্যমিক পাঠরত এক পড়ুয়া সোহম ভট্ট যা করছেন তা সত্যিই বিস্ময়কর!

মাত্র ১৭ বছর বয়সে নিজের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে পশু আর অসহায় মানুষের নিরন্তর সেবা.
মাত্র ১৭ বছর বয়সে নিজের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে প্রতিনিয়ত পশু আর অসহায় মানুষের নিরন্তর সেবা করে চলেছেন সোহম। বাবা সাধুচরণ এবং মা মিঠুরাণী বেলদা থানার সাউরীর উত্তর কোটবাড়ের বাসিন্দা। বাবা সাধুচরণ বরাবর গরু, ছাগল, ভেড়া কুকুর প্রভৃতি পোষ্যকে ভালোবাসতেন। সেই থেকে সোহমের পশুপ্রেম শুরু। ইতিমধ্যে ১০০ এরও বেশি অসহায় পশুকে ভালো করে তুলেছেন। আর মানুষের অসহায় অবস্থার কথা শুনলেই বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুটে যান তাঁদের কাছে।

সার্থক লিখেছিলেন কবি কুসুমকুমারী দেবী
তাঁর ” আদর্শ ছেলে” কবিতার সেই লাইনগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে –
“সে ছেলে কে চায় বল, কথায় কথায়
আসে যার চোখেজল, মাথা ঘুরে যায়?
মনে প্রাণে খাট সবে, শক্তি কর দান,
তোমরা ‘মানুষ’ হলে দেশের কল্যাণ৷”
সোহমের মানবপ্রেম আর পশু প্রেম নিয়ে সাধারণের মধ্যে উৎসাহের অন্ত নেই।
সোহমের কথায়
Constant service to animals by saving tiffin money : সোহমের কথায় ‘আমার শৈশব জীবনে জ্ঞান পড়ার পর থেকে আমি ওদের বন্ধু সুলভ আচরণ বুঝতে পেরে এবং কিছু অসৎ মানুষের করাল গ্রাসের শিকার নিজের চোখে দেখার পর ওদের প্রতি প্রেম ও ভালোবাসা আরো বেশি করে প্রগাঢ় হতে শুরু করে। আমার বর্তমান জীবন ও ভবিষ্যৎ জীবনকে আমি ওদের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছি এবং ফেলবো। এই ভালোবাসা আমার জন্ম থেকেই। তবে এই মানসিকতা আমার বাবার ছিল সেই সূত্রে আমি পেয়েছি।

একজনকে দেখে অনুপ্রাণিত
পশুদের সেবা, যত্ন করা অসূখ হলে রাস্তার সারমেয় বা অন্যান্য অবলাদের ওদের পুরো ট্রিটমেন্ট করা আমি একজনকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি এবং তার হাত ধরে শিখেছি তিনি হলেন সন্দিপ দাস (শিবু)দার কাছ থেকে, যাকে আমি ভগবানের মতো শ্রদ্ধা করি ও ভালোবাসি।
এছাড়া ও আমি প্রতিদিন রাস্তার অবলাদের খাওয়াই সারা রাস্তা ঘুরে ঘুরে
এবং নিজের জমানো টাকা থেকে গরীব দূঃখি দের সেবা করি। এটা না করলে মনে শান্তি পাই না। আর এসবকিছু করে আমি তৃপ্তি অনুভব করি।
Constant service to animals by saving tiffin money : সোহমকে অনেক সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়।
এই কাজটির জন্য সোহমকে অনেক সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়। তবুও তাঁর কথায় ‘সমস্যা যতই থাকুক আমার লক্ষ্য আমি অবলাদের হয়ে আগেও কাজ করেছি , এখন ও করছি আর ভবিষ্যতেও করবো। তার পাশাপাশি অসহায় মানুষের পাশে ও সবসময় দাঁড়াব’।
সমাজের এই মহত্তম কাজে সোহম শুধু একা নন, তাঁর কথায় ‘এই সমস্ত কাজের জন্য আমাকে বাড়ির লোকজন এর পাশাপাশি আমার রসায়ন বিষয়ের শিক্ষক -সৌমেন প্রধান স্যার অনেক দিক দিয়ে আমার পাশে থাকেন। আমার সাউরী ভোলানাথ বিদ্যামন্দিরের অনেক শিক্ষক মহাশয় ও আমাকে এই সমাজকল্যাণ কাজে এগিয়ে আসার জন্য প্রতিনিয়ত উৎসাহ দিয়ে চলেছেন। তাঁদেরকে আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শতকোটি প্রণাম।’

সোহমের মানবপ্রেম আর পশুপ্রেমে খুশি এলাকার মানুষ।
রাস্তায় অসুস্থ গরু, বাছুর, কুকুর, দেখলেই সোহম ছুটে যাচ্ছেন। তাদের চিকিৎসা করে সারিয়ে তুলছেন। এইতো সেদিন এক দারিদ্র্য পীড়িত মায়ের হাতে সোহম আর তাঁর বন্ধুরা যথাসাধ্য অর্থ তুলে দিলেন। কী খুশি সেই মা! এই খুশি মুখগুলো দেখতে চাওয়ই এখন সোহমের স্বপ্ন।
প্রশ্ন ওঠে এত কাজের জন্য সোহম অর্থের যোগাড় করেন কিভাবে? সোহমের জবাব ‘আমি এই সব কাজের জন্য যে অর্থ ব্যায় করি সেটা আমি আমার পড়াশোনা বাবদ বাঁচিয়ে রাখা টাকা থেকে, অযথা অর্থ অপব্যয় না করে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। এবং আমার বাবা এবং পরিবারের সকলে অনেক দিক দিয়ে আমাকে সাহায্য করেন’।

আগামী দিনে সকলের আশীর্বাদ নিয়ে এগোতে চান সোহম।
আগামী দিনে সকলের আশীর্বাদ নিয়ে এগোতে চান সোহম। এখন অবশ্য সোহমকে দেখে তাঁর বন্ধুবান্ধবও এগিয়ে আসছেন। পাশে দাঁড়াচ্ছেন সোহমের। সমাজে বেশিরভাগ মানুষ যঝন স্বার্থ সর্বস্ব তখন ঠিক বিপরীত পথে হাঁটা পশুপ্রেমী সোহম শুধু উদাহরণ নন, উৎসাহেরও উৎসমুখ হয়ে উঠছেন। এটাই গর্বের…
crogdb